মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
১৭ বছর বয়সী ওয়াদিফা আহমেদ আজ শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান জোনাল ৩.২ দাবা প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব অর্জন করেছেন এবং আগামী ৫ জুলাই জর্জিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য নারী বিশ্বকাপে লড়াইয়ের যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
ফিদে মাস্টার ওয়াদিফা শুরু থেকেই শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান জোনাল ৩.২ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের (নারী বিভাগ) দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। কখনো এককভাবে শীর্ষে ছিলেন, আবার কখনো শ্রীলঙ্কার ওশিনির সঙ্গে শীর্ষস্থান ভাগাভাগি করেছেন তিনি। আজকের চূড়ান্ত রাউন্ডে বাংলাদেশের নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার রাণী হামিদের বিপক্ষে ড্র করেই তিনি তিনটি বড় অর্জন নিশ্চিত করেন—চ্যাম্পিয়নশিপ জয়, বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন এবং নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব লাভ।
জয়ে উচ্ছ্বসিত ওয়াদিফা কলম্বো থেকে বলেন, "আমি আগেই ওশিনিকে হারিয়েছিলাম। এমনকি সে যদি শেষ রাউন্ড জিতত, তবুও টাইব্রেকার হিসেবে আমার শিরোপা নিশ্চিত ছিল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মানে হলো আমি বিশ্বকাপে খেলব এবং নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাবও পেলাম। এটা অবিশ্বাস্য লাগছে!"
সাধারণত নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব অর্জনের জন্য ২২০০ রেটিং এবং নারী আন্তর্জাতিক মাস্টারের তিনটি নর্ম (রীতি) পূরণ করতে হয়। গত বছর হাঙ্গেরিতে ওয়াদিফা একটি নর্ম পূরণ করেছিলেন। তবে ফিদে নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ফিদে মাস্টার যদি এশিয়ান জোনাল বা বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার জেতে, তাহলে তিনি সরাসরি নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব পেয়ে যান, নর্ম পূরণের প্রয়োজন হয় না। সেইসঙ্গে রেটিংয়ের শর্ত ২২০০ থেকে ২০০০-এ কমে আসে। ওয়াদিফার বর্তমান রেটিং ২০৯১ হওয়ায় তিনি সব শর্ত পূরণ করেছেন। উল্লেখ্য বাংলাদেশ থেকে দুই বছর আগে জান্নাতুল ফেরদৌস জোনাল চ্যাম্পিয়ন হলেও তার ২০০০ রেটিং না হওয়ায় এখনো নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব পাননি।
১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার হয়েছিলেন রাণী হামিদ। দুই দশক পর শামীমা সুলতানা লিজা এই খেতাব অর্জন করেন। ছয় বছর আগে শিরিন সুলতানা হন দেশের তৃতীয় নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার। ওয়াদিফার সাফল্যের ফলে আজ তিনি বাংলাদেশে চতুর্থ নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন।
এর আগে বাংলাদেশের কোনো নারী আন্তর্জাতিক মাস্টারই গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারেননি। কিন্তু দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ওয়াদিফা সেটা বদলাতে চান। তিনি বলেন, "আমার প্রথম লক্ষ্য বাংলাদেশের প্রথম মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া। এরপর আমি গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার জন্য কাজ করব। আমার স্বপ্ন পূরণে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।" নারী গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পেতে হলে ২৪০০ রেটিং ও নারী গ্র্যান্ডমাস্টারের তিনটি নর্ম পূরণ করতে হয়। আর গ্র্যান্ডমাস্টার হতে হলে ২৫০০ রেটিং ও গ্র্যান্ডমাস্টারের তিনটি নর্ম পূরণ করতে হয়।
ওয়াদিফার বড় বোন ওয়ালিজাও দাবা খেলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুজনই সফলতা পেয়েছেন। তারা জাতীয় জুনিয়র মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ দুটি আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন—ওয়ালিজা আগে, ওয়াদিফা পরে। তবে ওয়াদিফা বড় বোনের আগেই নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব পেলেন। তিনি বলেন, "আমরা দুজনেই এই খেতাবের অর্জনের চেষ্টা করছিলাম। আমি আগে পেয়েছি। তবে আমার বিশ্বাস, সে-ও (ওয়ালিজা) খুব শিগগিরই এটি অর্জন করবেন।"
ওয়াদিফা বর্তমান জাতীয় মহিলা দাবা চ্যাম্পিয়ন। এ কারণে গত বছর তিনি মন্টেনেগ্রোতে অনুষ্ঠিত জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে সেখানে অংশ নিতে পারেননি। এবার জোনাল চ্যাম্পিয়ন হওয়া, নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব পাওয়া এবং বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ তৈরি হওয়ায় সেই হতাশা কিছুটা লাঘব হয়েছে।
অপরদিকে নারী বিভাগের মোট ২৩ জন প্রতিযোগীর মাঝে রাণী হামিদ ৭ম এবং নারী ফিদে মাস্টার আঞ্জুম ১২শ হয়েছেন।
খোলা বিভাগে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মাস্টার মনোন রেজা নীর চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। নবম রাউন্ডে শ্রীলঙ্কার লিয়ানাগে রানিন্দু দিলশানের বিপক্ষে ড্র করে তিনি মোট সাত পয়েন্ট সংগ্রহ করেন। ফলে তিনি এবার দাবা বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
ফিদে মাস্টার তাহসিন তাজওয়ার জিয়া ষষ্ঠ রাউন্ড পর্যন্ত এককভাবে শীর্ষে থাকলেও শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। নবম রাউন্ডে তিনি সানুক নানায়াক্কারাকে পরাজিত করে ৬.৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করেন।
এছাড়াও, বাংলাদেশের প্রয়াত গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের ছেলে তাহসিন তার আন্তর্জাতিক মাস্টারের ২য় নর্ম অর্জন করেছেন। এর আগে তিনি গত এশিয়ান জোনাল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম নর্ম অর্জন করেছিলেন।