বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১
বাংলাদেশের ইন্টারনেট জগতে একটি পরিচিত নাম। কিন্তু অনেকেই জানেন না এই নামটির পেছনের মজাদার ইতিহাস।
২০১২ সালের দিকে ফেসবুকে একটি পোস্টের মন্তব্যের বাক্সে একটি ঝগড়া চলমানকালে এক পর্যায়ে জয়ন্ত কুমার নামের জনৈক ব্যক্তি মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘Murad takla jukti dia kata bal, falti pic dicos kan! Lakapora koira kata bal.’’ (‘‘মুরোদ থাকলে যুক্তি দিয়া কথা বল, ফালতু পিক দিছস কেন? লেখাপড়া কইরা কথা বল’’)। মন্তব্যটি হাস্যরসাত্মক হওয়ায় সেটি নিয়ে হাসাহাসি চলতে থাকে এবং ফেসবুকে মন্তব্যটির স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর থেকে জয়ন্তের মন্তব্যের "Murad Takla" (মুরোদ থাকলে) পরিবর্তিত হয়ে মুরাদ টাকলা হয়ে যায়। এই শব্দযুগল জনপ্রিয় হয়ে যায় এবং সেটি বিকৃত বাংলায় লেখা ব্যক্তির সমার্থক বাক্যাংশে পরিণত হয় ও লোকজন তাদেরকে মুরাদ টাকলা ডাকতে শুরু করে।
ঘটনার পরে "মুরাদ টাকলা" নামক একটি ফেসবুক পাতা তৈরি হয় যেখানে টাকলা ভাষায় (বিকৃত বাংলা) লেখা পোস্টের স্ক্রিনশট প্রকাশ করা শুরু হয় যেখানে পাতার ভক্তরা স্ক্রিনশটে লেখা টাকলা ভাষার পাঠোদ্ধার করতে হত। ধীরে ধীরে এই জাতীয় পাতার প্রচেষ্টায় বিকৃত বাংলার ব্যাপারে বাংলাদেশের নেটিজেনদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি হয়।
বর্তমানে মুরাদ টাকলা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির চরিত্র বা কাউকে নির্দিষ্ট করে বুঝাতে ব্যবহার করা হয় না। যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইংরেজি অক্ষর দিয়ে ভুলভাবে বা বিকৃত বাংলা (বাংলিশ) লিখে তাদেরকে মুরাদ টাকলা বলে অভিহিত করা হয়।
মুরাদ টাকলারা যে পদ্ধতিতে বিকৃত বাংলায় লিখে তাকে বলে "টাকলা ভাষা"। অনেকসময় এই ভাষায় লেখা কোনকিছু অশ্লীল মনে হলেও তা নিতান্ত সাধারণ লেখা। যার জন্য মুরাদ টাকলা পেজের এই আন্দোলন, এবং আন্দোলন থেকে মুরাদ টাকলার জনপ্রিয়তা।
টাকলা ভাষায় লেখা বাক্যের অর্থ বুঝার উদ্দেশ্যে ২০২০ সালে সিমু নাসের ও পীয়্যান মুগ্ধ নবী দুজনের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে মুরাদ টাকলা অভিধান। অভিধানের পরিচিতিতে লেখা রয়েছে "অন্তর্জালে মুরাদ টাকলা নামের এই ভাষায় বেশ কয়েক বছর হয় নাজেহাল হচ্ছেন বাংলার আপামর জনগণ। এই ভোগান্তি থেকে জাতিকে বাঁচাতে এল—মুরাদ টাকলা অভিধান।"
উৎস
edit- "আসলে ‘মুরাদ টাকলা’ কে?" — টিবিএস নিউজ, ৭ ডিসেম্বর ২০২১
- "কীভাবে এল ‘মুরাদ টাকলা’?" — প্রথম আলো, ৮ ডিসেম্বর ২০২১
- "কে এই ‘মুরাদ টাকলা’?" — দ্য ডেইলি স্টার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭